Monday, July 30, 2018

সড়ক দুর্ঘটনায় দেশজুড়ে একের পর এক মানুষ মরছেই, এভাবে চলছেই

সড়ক দুর্ঘটনায় দেশজুড়ে একের পর এক মানুষ মরছেই। ২৯ জুলাই রাজধানীর র‍্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে কুর্মিটোলায় ফ্লাইওভারের ঢালে দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হয় দুই শিক্ষার্থী। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম (১৬)। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ১৩ জন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় দেশ  এখন অনেকটাই উতপ্ত। হয়তো এটাও ঢাকা পরে যাবে, আবার কোন দুর্ঘটনার আড়ালে। এভাবে চলছেই।

এই তো কিছুদিন আগে ১ জুলাই, বসুমতি পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শাহরিয়ার সৌরভ। এর এক দিন পরেই ২ জুলাই মিরপুরে দিশারী পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সৈয়দ মাসুদ রানা। এর আগে গত ১৭ মে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দুই বাসের রেষারেষিতে আহত হওয়ার পর প্রাণ হারান একটি অনলাইন গণমাধ্যমের কর্মকর্তা নাজিমউদ্দীন।

এছাড়া ৩ এপ্রিল রাজধানীর পান্থপথে রাজীবের হাত কাটা পড়ল, সেই রাজীব আজ পরপারে। ৫ এপ্রিল সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গৃহবধূ আয়েশা খাতুনের মেরুদণ্ড ভাঙল। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তিনি আর কোনোদিন দাঁড়াতে পারবেন না। ১১ এপ্রিল ফার্মগেটে বেসরকারি চাকরিজীবী রুনি আক্তারের পা থেঁতলে গেল। পায়ের কার্যক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ১৪ জুলাই রাজধানীর গুলিস্তান মোড়ে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নার্স  ঝুমুর আক্তার রাখির ডান পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ১৮ জুলাই রাজধানীতে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তির মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে বাসের চাকা। রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। তিনি বারডেম হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের এক চিকিৎসকের গাড়িচালক ছিলেন।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিল্গউএইচও) একটি  প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, চালকের মাদক গ্রহণ, সিটবেল্ট না বাঁধা, হেলমেট ব্যবহার না করা, ট্রাফিক আইন না মানা এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারকারী তথা চালক, যাত্রী ও পথচারীরা দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রতিদিনই রাস্তায় তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশসহ সদস্যদেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৭ সালে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক হাজার ৯৬০ জনেরও বেশি মানুষ। আহত ও পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েকগুণ মানুষ। প্রতি মাসে ২১৮ জন এবং প্রতিদিন গড়ে ৭ দশমিক ২৫ জন মানুষ মারা যাচ্ছে।
এছাড়া বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১২ হাজার মানুষ। দুর্ঘটনাকবলিত কোনো যানবাহনের চালককে আটক করা হলেও বেশিরভাগ সময়ই তাদের শাস্তি হয় না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা, জরুরি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। শুধু চালকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ নৈতিক ও কঠোর থাকতে পারলেই দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

আমাদের মাঝে অবশ্যই অনেকের সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। যানবাহনের ধাক্কা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। তার অন্যতম কারণ হলো, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা। নেই কোনো নির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী নীতিমালা, নেই উপযুক্ত শাস্তির বিধান। ফলে বাস মালিক থেকে শুরু করে ড্রাইভার, যাত্রী, পথচারী কেউই আইনের তোয়াক্কা না করে যেমন খুশি নিজেদের পরিচালিত করছে। বাস মালিকদের কাছ থেকে বাস নিয়ে চালক-হেলপাররা স্বস্তিতে গাড়ি চালাতে পারছে না। দিন শেষে মালিকদের নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বুঝিয়ে দিতে হয়। জ্যামের শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে বাসচালকরা যথেষ্ট ট্রিপ দিতে ব্যর্থ হয়, তার ওপর বাসের তেল ও অন্যান্য খরচও আছেই। কিন্তু দিন শেষে মালিককে টাকা বুঝিয়ে দিতেই হবে আর এ কারণে চালক-হেলপার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে বাস চালায়। তাদের লক্ষ্য থাকে অন্য বাসের তুলনায় অধিক যাত্রী বহন করা ও যথেষ্ট আয়-উপার্জন করা। চালক-হেলপারদের চিন্তায় আপনার-আমার মতো যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা থাকে না।

রাজধানীর অনেক রাস্তায় সিগন্যাল বাতি নেই, যা আছে তার অধিকাংশই নষ্ট। ফলে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ঠিকমতো গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে পারেন না। ফলে বাসে থাকা যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম-সিগন্যালে আটকে বিরক্ত হয়ে যায়। সিগন্যাল ছাড়া মাত্রই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বাসের চালক-হেলপারদের গালাগাল করতে থাকে। অনেক সময় তা অকথ্য ভাষায় চলে যায়। আর চালকরা উত্তেজিত হয়েই সিগন্যাল পার হতে থাকে। দুর্ভাগা তারাই, যেসব পথচারী এ সময়টা রাস্তা পারাপারের চেষ্টা করে। রাজধানীর অধিকাংশ দুর্ঘটনা এ কারণেই হয়।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ বেপরোয়া গতি, তাছাড়া রাস্তা ঘাটের বেহাল দশাও মূলত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। অদক্ষ চালকের হাতে বেপরোয়া গতির যানবাহন হয়ে উঠেছে মৃত্যুর দূত। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বোচ্চ কঠোর না হলে অপমৃত্যু থামানো যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার এই বাড়বাড়ন্ত সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। গত ২৫ জুন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর একটি হলো এই যে- যানবাহনের কোনো চালক টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি যান চালাবেন না। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ থেকে পরিষ্কার হলো সমস্যাটি কত গুরুতর। এ থেকে আরও স্পষ্ট হলো যে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সমস্যার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কারণ, এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটে চালকদের কারণে। সড়কভেদে প্রতিটি যানবাহনের জন্য গতি নির্দিষ্ট করে তা মানতে বাধ্য করতে হবে।বেপরোয়াভাবে যান চালানো এবং একটানা দীর্ঘ সময় চালানো দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বিনা ব্যতিক্রমে দেশের সবখানে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যানবাহনের মালিকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন, তাঁরা যেন একই চালককে দিয়ে দীর্ঘ সময় যানবাহন না চালান, সেটা পরিবহন মালিকদের সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী যানবাহনের চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন।দক্ষ চালক তৈরির ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রশিক্ষণ ও অদক্ষ চালক-সহকারীদের কারণেও অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত চালক ও সহকারীর ভীষণ ঘাটতি রয়েছে; তাঁদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। যাকে-তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করা না গেলে কখনোই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। একটি  গবেষণা অনুযায়ী, মাদকাসক্ত চালকের কারণে দেশে ৩০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মাদকাসক্ত চালকের লাইসেন্স বাতিল করাসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকদের সিটবেল্ট ব্যবহারের প্রতি অনীহা গ্রহণযোগ্য নয়।

এ দেশে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে রাস্তা পারাপারের সময়, চলন্ত যানবাহনের ফাঁকফোকর দিয়ে হেঁটে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা ঢাকা শহরে অত্যন্ত বেশি। প্রধানমন্ত্রী এদিকেও যথার্থই দৃষ্টি দিয়েছেন: তিনি বলেছেন, অতিনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে, সে জন্য সিগন্যাল মেনে চলতে হবে, জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের নৈরাজ্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থায় অনেক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব; পথেঘাটে মানুষের অসতর্ক ও অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।এ বিষয়গুলোতে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে এসব ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা না কমার আরও একটি বড় কারণ- দায়ী চালকদের বিচার না হওয়া। দোষী হলেও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হার খুবই কম। এতে চালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চালকদের সঙ্গে মালিক প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন সংগঠনগুলোকেও সচেতন হতে হবে। দুর্ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিও সচেষ্ট হতে হবে।

Thursday, July 26, 2018

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিলেন যারা

 ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর। ১৮৫৭ সালে ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং 'দ্য অ্যাক্ট অফ ইনকরপোরেশন' পাশ করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল কোলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে থেকেই ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ইউরোপিয় মডেলে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ছিল উঁচু। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন মূলত পশ্চিম বঙ্গের উঁচুতলার হিন্দু সন্তানরা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯টি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় নয়টি। তবে সেটাই পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ।

কেন পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল:

১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সি ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন এক প্রদেশ করা হয়। যার প্রচলিত নাম বঙ্গভঙ্গ। পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসা ছিল এই উদ্যোগের একটি অংশ। বঙ্গভঙ্গের এই সময়টা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য, মাত্র ছয় বছর। কারণ এর মধ্যেই পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু নেতারা প্রবল আন্দোলন করেন এই বঙ্গভঙ্গের। 
এদিকে মুসলমান নেতারা নতুন প্রদেশ হওয়াতে শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবেন এই আশায় উজ্জীবিত হন।  কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের বিরোধিতার মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। ফলে মুসলমানদের ক্ষোভ আরো পুঞ্জিভূত হতে থাকে। তারা মনে করে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।


যারা বিরোধিতা করেছিলে:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম সৈয়দ আবুল মকসুদের 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বইতে উঠে এসেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন বলে উল্লেখ করা হয়। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে তাঁর ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
এসংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন?
শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্যার নীলরতন সরকার।

কেন এই বিরোধিতা?:

কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ' নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন-

এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।

দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারী বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি।

তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি বিরোধিতা করেছিলেন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা কী ছিল সেটা নিয়ে বিস্তর লেখা-লেখি হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। যারা বলেছেন তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোন তথ্য প্রমাণ দেন নি।
সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের সেই সময় যাদের সাথে উঠা-বসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। তাই অনেকেই সহজ সমীকরণ মিলিয়ে লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "শ্রেণীস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"।
আবার যারা রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি বলেছেন তাঁরা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না। ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলাতযাত্রার কথা ছিল। তাঁর সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তাঁর মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। কলকাতায় কয়েক দিন বিশ্রাম করে ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে চলে আসেন এবং ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বসে ১৮টি গান ও কবিতা রচনা করেন"।

যারা পক্ষে কাজ করেছিলেন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা যে হয়েছিল নানা পক্ষ থেকে সেটা ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাওয়া যায়।
কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটা বোঝাতে এবং প্রতিষ্ঠার ব্যাপার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যাঁরা তাদের কথা না বললেই নয়।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে।








জাপানে মোবাইল মসজিদ

২০২০ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে। ওই সময় অন্যদে সঙ্গে বিশ্বের অনেক মুসলমানও দেশটিতে যাবেন। তাই জাপান সরকার ‘মোবাইল মসজিদ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বড় এই ক্রীড়া আসরকে সামনে রেখে এই ‘মোবাইল মসজিদ’ তৈরি করেছে জাপান সরকার। জাপানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি মসজিদ রয়েছে। তবে ‘মোবাইল মসজিদ’-এর মাধ্যমে যেমন অলিম্পিকের মতো বড় আসরের প্রচার ও প্রসারের কাজ চলছে, তেমনি এ ধারণা মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টাও করা হচ্ছে।
২৫ টনি ট্রাককে একটু বদলিয়ে সেটি নামাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ৪৮ বর্গমিটারের ওই জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন নামাজ পড়তে পারবেন। মোবাইল মসজিদের ভেতর ওজুর জন্য পানি রয়েছে। কিবলার দিকও নির্দেশ করা আছে। এ প্রকল্পের জন্য জাপান সরকার ৯০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। অলিম্পিকের সময় মোবাইল মসজিদ বিভিন্ন স্টেডিয়ামের সামনে রাখা হবে। মোবাইল মসজিদ বানাতে চার বছর লেগেছে। 

মোবাইল মসজিদের এ ধারণার জনক টোকিওর বাসিন্দা ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে। এর আগে এথেন্সে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসে ফুটবাথ তৈরি করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে লন্ডন গেমসে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। কাতারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে মোবাইল মসজিদ বানানোর এ ধারণা তাঁর চিন্তার মধ্য আসে। তিনি বলেন, ‘নামাজ পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকসে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।’ 


ইয়াবা

বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত মাদক ইয়াবা। বলা হচ্ছে, দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের উপরে। তার আগে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন।  একটি গবেষণা সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ ইয়াবাসেবী। ২৮ শতাংশ আসক্ত ফেনসিডিল এবং হেরোইনে। গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে ইয়াবা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে যখন টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মিয়ানমার থেকে এই ট্যাবলেট আসতে শুরু করে। তারপর এটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবার জনপ্রিয়তার পেছনে দুটো কারণকে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা।
  • একটি কারণ শরীরের উপর এর তাৎক্ষণিক প্রভাব
  • আর অন্যটি সহজলভ্যতা। 
ইয়াবা হচ্ছে এমফিটামিন জাতীয় ড্রাগ- মেথাএমফিটামিন। অনেকের মধ্যেই এটি সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে। তারা মনে করেন, ইয়াবা ট্যাবলেটের মতো গিলে খাওয়া হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। হেরোইনের মতো করেই খেতে হয় ইয়াবা। এলোমুনিয়ামের ফয়েলের উপর ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে নিচ থেকে তাপ দিয়ে ওটাকে গলাতে হয়। তখন সেখান থেকে যে ধোঁয়া বের হয় সেটা একটা নলের মাধ্যমে মুখ দিয়ে গ্রহণ করা হয়। তখন সেটা মুহূর্তের মধ্যেই সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রে গিয়ে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

ইয়াবাকে বলা হয় 'আপার ড্রাগ' কারণ এটি গ্রহণ করলে শুরুতে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। যারা ইয়াবা গ্রহণ করেন তারা ভাবে
  • ইয়াবায় শরীর চাঙা হয়
  • রাতের পর রাত জেগে থাকা যায়
  • যৌন উদ্দীপনা বেড়ে যায়
  • হেরোইন ও ফেনসিডিল খেলে শরীর ঝিম মেরে থাকে
  • তখন বিচরণ করে কল্পনার রাজ্যে
হেরোইন ও ফেনসিডিল হচ্ছে ইয়াবার বিপরীতধর্মী ড্রাগ। এগুলো নারকোটিক এনালজেসিক। অর্থাৎ ব্যথানাশক ওষুধ। এটিকে বলা হয় 'ডাউনার ড্রাগ' কারণ এটি খেলে সে ঝিম মেরে থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই দুটো একই ধরনের মাদক। হেরোইন হচ্ছে ওপিয়ামের একটি প্রাকৃতিক ডেরিভেটিভ আর ফেনসিডিল সিনথেটিকের। এই দুটো ড্রাগের মধ্যে যে রাসায়নিকটি থাকে সেটি হচ্ছে কোডিন ফসফেট। হেরোইনের মধ্যে এটি একটু বেশি পরিমাণে থাকে। কোডিন ফসফেট খেলে মানুষ স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করে। নিজেকে রাজা বাদশাহ ভাবতেও অসুবিধা হয় না। 

স্বাস্থ্য ঝুঁকি

অনেকে ইয়াবা গ্রহণ করে যৌন উদ্দীপক হিসেবে। প্রথম দিকে সেটা কাজ করে যেহেতু এটা খেলে শারীরিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার যৌন ক্ষমতা একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়। শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যায়। মেয়েদের মাসিকেও সমস্যা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ইয়াবা খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। লিভার সিরোসিস থেকে সেটা লিভার ক্যান্সারেও পরিণত হতে পারে।
  • যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়
  • ফুসফুসে পানি জমে
  • কিডনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়
  • লিভার সিরোসিস থেকে ক্যন্সারও হতে পারে
  • মেজাজ চড়ে যায়, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, নিষ্ঠুর হয়ে যায়
  • রক্তচাপ বেড়ে যায়
  • সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়
  • মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় 
  • স্বাস্থ্যের অবনতি হয়
  • ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় শরীরে
  • যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়
  • ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ 
ফেনসিডিল ও হেরোইনের বেলাতেও দ্রুত গতিতে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। কারণ তারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে পারে না। তাদের খাওয়ার প্রয়োজনও খুব একটা পড়ে না। কারণ হেরোইন কিম্বা ফেনসিডিল খেলে ক্ষুধা কেটে যায়। ফলে তাদের সাধারণ পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয় না। যার কারণে তাদের শরীরে সব ধরনের ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। হেরোইন ও ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু ইয়াবার ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা তৈরি হতে সময় লাগে না। 

গবেষকরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সেটা বলা কঠিন। তবে ছেলেরা যতো সংখ্যায় চিকিৎসা নেয়, মেয়েরা কিন্তু অতোটা নেয় না। সামাজিক কারণেই তাদের নেশা সংক্রান্ত সমস্যা পরিবার থেকে গোপন রাখা হয়। ফলে এটা বোঝা একটু কঠিন যে মেয়েরা কি পরিমাণে আসক্ত, মেয়েদের ইয়াবার নেশা শুরু হয় ঘুমের বড়ি থেকে। নানা ধরনের মানসিক যন্ত্রণার কারণে তারা যখন রাতে ঘুমাতে পারে না তখন তারা ঘুমের বড়ির আশ্রয় নেয়। তারপর ধীরে ধীরে ইয়াবার মতো অন্যান্য মাদকেও আসক্ত হয়ে যায়। 
 

বায়োপিক নির্মাণ

বলিউডে খেলোয়াড়দের নিয়ে একাধিক ‘আত্মজীবনীমূলক ছবি’ হয়েছে। অধিকাংশ বায়োপিক বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করেছে। শুধু ক্রিকেটারদের নিয়ে চারটি আত্মজীবনীমূলক ছবি হয়েছে। পর্দায় যে তারকারা এসব বায়োপিকে অভিনয় করেছেন, তাঁদের পারিশ্রমিক আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু যে খেলোয়াড়দের নিয়ে বায়োপিক নির্মাণ করা হয়েছে, তাঁরা কত পেয়েছেন, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।

‘মেরি কম’
নারী খেলোয়াড়ের ওপর বলিউডে একটি মাত্র বায়োপিক হয়েছে। আর এই ছবিটি হলো ‘মেরি কম’। তবে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেওলের ওপর বায়োপিক নির্মাণের কাজ চলছে। সাইনার চরিত্রে দেখা যাবে বলিউড তারকা শ্রদ্ধা কাপুরকে। প্রখ্যাত বক্সার ‘মেরি কম’-এর জীবনের ওপর বলিউডে ছবি নির্মাণ করা হয়। প্রখ্যাত এই বক্সারের চরিত্রে অভিনয় করেন হলিউড ও বলিউডের তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। মেরি কম এই ছবির জন্য ২৫ লাখ রুপি নিয়েছিলেন।


‘পান সিং তোমর’
ইরফান খান অভিনয় করেছিলেন ‘পান সিং তোমর’-এর চরিত্রে। প্রখ্যাত দৌড়বিদ পান সিংয়ের ওপর নির্মিত এই বায়োপিক বক্স অফিসে তেমন আয় করতে পারেনি। তবে ইরফান তাঁর অভিনয়ের জোরে সবার মন জয় করেন। বাস্তবের পান সিং তোমর তাঁর জীবনের ওপর নির্মিত এই ছবির জন্য কোনো অর্থ নেননি।


‘ভাগ মিলখা ভাগ’
কিংবদন্তি দৌড়বিদ মিলখা সিংয়ের জীবনের ওপর নির্মিত ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ ছবিটি। পর্দায় ভারতের ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় ফারহান আখতারকে। ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করে। এই ছবিতে ফারহানের অভিনয় ভীষণ প্রশংসিত হয়। রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরা পরিচালিত এই ছবিতে মিলখা সিং যে অর্থ নিয়েছিলেন, তার অঙ্ক শুনলে রীতিমতো অবাক হতে হবে। ‘উড়ন্ত শিখ’ এই ছবির বিনিময়ে মাত্র এক রুপি নিয়েছিলেন।


‘দঙ্গল’
শুধু বায়োপিক হিসেবে নয়, ‘দঙ্গল’ ছবিটি বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি। আয়ের হিসাবে আমির খান অভিনীত এই ছবি হিন্দি ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় সবার ওপরে আছে। বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ এই ছবিতে কুস্তিগির মহাবীর সিং ফোগতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ছবির জন্য মহাবীরকে ৪০ লাখ রুপি দেওয়া হয়।


‘আজহার’
ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ওপর একটি বায়োপিক নির্মাণ করা হয়। এই বায়োপিক হলো ‘আজহার’। ছবিটি বক্স অফিসে মোটেও ব্যবসা করতে পারেনি। আর সাধারণ মানুষেরও মন জয় করতে পারেনি। আজহারের চরিত্রে অভিনয় করেন এমরান হাশমি। তবে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন এই ছবির জন্য কিছুই নেননি।


‘এম এস ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’
নীরাজ পাণ্ডে পরিচালিত ‘এম এস ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিটি রীতিমতো প্রশংসিত হয়েছিল। ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনের ওপর নির্মিত এই ছবি। ধোনির চরিত্রে অভিনয় করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্রিকেটার ধোনি এই ছবির জন্য যে পরিমাণ অর্থ নিয়েছিলেন, তার অঙ্ক শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। মহেন্দ্র সিং ধোনি এই ছবির জন্য ৬০ কোটি রুপি নেন। এ ব্যাপারে তিনি শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে গেছেন।


‘শচীন-আ বিলিয়ন ড্রিমস’
ভারতীয় ক্রিকেট জগতের কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকা শচীন টেন্ডুলকারের জীবনের ওপর নির্মিত বায়োপিকটি হলো ‘শচীন-আ বিলিয়ন ড্রিমস’। পর্দায় বেশির ভাগ সময়জুড়ে লিটল মাস্টারকেই অভিনয় করতে দেখা যায়। শচীন এই ছবির জন্য ৪০ কোটি রুপি নেন।

Wednesday, June 27, 2018

মন সর্বদা ভালো রাখার উপায়

অনেক কারনেই বিষণ্ণতায় ভোগেন থাকেন মানুষ। পারিবারিক সমস্যা, সম্পর্ক জনিত সমস্যা, কাজের বিফলতাসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ বিষণ্ণ হয়ে পড়ছেন। বিষণ্ণতা আপাত দৃষ্টিতে খুব বেশি ক্ষতিকর মনে না হলেও বিষণ্ণতা এক ভয়ানক ব্যাধি।যা মানুষকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। বিষণ্ণতার সুদূরপ্রসারী ফলাফল মোটেই ভালো নয়। যারা প্রায় সময়ই বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়। তাই বিষণ্ণতাকে অবহেলা নয়।
বিষণ্ণতা দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। নতুবা মাত্রাতিরিক্ত বিষণ্ণতার দরুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মনের অজান্তেই। আপনি যদি কোনো কারণে নিজেকে কিংবা কোনো আপনজনকে  বিষণ্ণ দেখতে পান তবে তা অবহেলা না করে দূর করার কাজে নেমে পড়ুন। এতে করে আপনি মারাত্মক কোনো অঘটন থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

মানুষের মন নানা বিষয়ে, বিভিন্ন কারণে খারাপ হতে পারে। আসুন, জেনে নেয়া যাক মন খারাপকে ভালো করতে প্রতিদিন যে কাজগুলো করতে পারেন আপনি। নিয়মিত কাজগুলো করুন।

প্রতিদিনের একটি রুটিন তৈরি করুন : বিষণ্ণতায় ভোগলে জীবনের মূল্যবোধ থেকে দূরে সে আসা হয়। কোনো রুটিন থাকে না। তাই সর্বপ্রথম একটি রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করুন। রুটিন মেনে চলা আপনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং বিষণ্ণতা থেকে দূরে রাখতে পারবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন : গবেষকদের মতে, শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় ,যা আমাদের ভাললাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে এই হরমোনের উৎপাদন আপনাকে রাখবে বিষণ্ণতা মুক্ত। যদি ব্যায়াম করতে না পারেন তবে হেঁটে আসুন খানিক ক্ষন। ভালো লাগবে।

পরিমিত ঘুমান : যারা বিষণ্ণতায় ভোগে থাকেন তাদের বেশিরভাগেরই রয়েছে অনিদ্রা জনিত সমস্যা। রাতে ঘুম না হলে বিষণ্ণতা আরও চেপে বসে মাথায়। তাই প্রথমে অনিদ্রা দূর করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম করে ঘুম আনতে হবে চোখে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন।

ইচ্ছে করে কাজের দায়িত্ব নিন : বাসাবাড়িতে কিংবা কর্মক্ষেত্রে আপনাকে কাজ না দিলেও নিজে থেকে ইচ্ছে করে কাজের দায়িত্ব নিন। এর কারণ হলো আপনি যতক্ষণ কাজে ব্যস্ত  থাকবেন ততক্ষণ আপনার মধ্যে কোনো ধরণের বিষণ্ণতা ভর করবে না। এভাবে নিয়মিত কাজ করলে আপনার বিষণ্ণতা দূরে পালাবে।

নিজে নিজে লক্ষ্য স্থির করুন : আপনি যদি দিনের অনেকটা সময় বিষণ্ণ হয়ে ঘরের কোণে কাটান তবে আপনার অবশ্যই নিজেকে এর থেকে বের করার জন্য কাজ করতে হবে। নিজে নিজে একটি লক্ষ্য স্থির করে নিন। আপনাকে নতুন কিছু করতে হবে এই লক্ষ্য মেনে কাজ করলে বিষণ্ণতা ভুলে থাকতে পারবেন। এবং কিছুদিনের মধ্যেই বিষণ্ণতার বিষ দূর হবে আপনার মন থেকে।



নিজের নেতিবাচক চিন্তাকে নিজেই চ্যালেঞ্জ করুন : আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আমি পারবো না, আমাকে কেউ ভালবাসে না ইত্যাদি নেতিবাচক চিন্তা বিষণ্ণতা ডেকেই আনে না, বিষণ্ণতা বাড়ায়ও। তাই এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলতে নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ করুন। চ্যালেঞ্জ জিতে নিজেকে ভুল প্রমানের মাঝেও আনন্দ খুঁজে পাবেন। দূর হবে বিষণ্ণতা। আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। অন্যরা পারলে আমিও অবশ্যই পারবো এই মনোবল সৃষ্টি করতে হবে।

মোজায় দুর্গন্ধ হলে কী করবেন?


পা ঘামছে সারা দিন! জুতা পরার উপায় নেই! কারণ, শরীরের অন্যান্য অংশে ঘাম না হলেও, মোজায় ভেজা বা চটচটে ভাব। কিন্তু জুতা খোলার উপায় নেই। কারণ, জুতা খুললেই প্রচণ্ড দুর্গন্ধ! মোজায় পারফিউম বা পাউডার মেখেও লাভ হয় না। জেনে নিন কীভাবে মুক্তি পাবেন এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে।

১. সুতির মোজা ব্যবহার করুন।
২. যাদের এমন সমস্যা হয়, তাদের ঘন ঘন চা বা কফি না খাওয়াই ভালো।
৩. মসলাদার (স্পাইসি) খাবারদাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. সপ্তাহে অন্তত একবার জুতার ভেতরে সুগন্ধি পাউডার দিয়ে, ভালো করে কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
৫. মাঝেমধ্যে জুতাগুলোকে রোদে দিন।
৬. একই মোজা দু’দিন ব্যবহার করবেন না।
৭. নিয়মিত পা পরিষ্কার রাখুন।
৮.বাইরে থেকে ঘরে ফিরে গরম পানিতে একটু লবণ ফেলে ভালো করে পা ধুয়ে নিন।
৯. ভালো করে পা মুছে, ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।