বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত মাদক ইয়াবা। বলা হচ্ছে, দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের উপরে। তার আগে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন। একটি গবেষণা সাময়িকীতে
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ
ইয়াবাসেবী। ২৮ শতাংশ আসক্ত ফেনসিডিল এবং হেরোইনে। গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের
কাছে ইয়াবা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে যখন টেকনাফ বর্ডার
দিয়ে মিয়ানমার থেকে এই ট্যাবলেট আসতে শুরু করে। তারপর এটি খুব দ্রুতই
ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবার জনপ্রিয়তার পেছনে দুটো কারণকে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা।
- একটি কারণ শরীরের উপর এর তাৎক্ষণিক প্রভাব
- আর অন্যটি সহজলভ্যতা।
ইয়াবা হচ্ছে এমফিটামিন জাতীয় ড্রাগ- মেথাএমফিটামিন। অনেকের মধ্যেই এটি সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে। তারা মনে করেন, ইয়াবা ট্যাবলেটের মতো গিলে খাওয়া হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। হেরোইনের মতো করেই খেতে হয় ইয়াবা।
এলোমুনিয়ামের ফয়েলের উপর ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে নিচ থেকে তাপ দিয়ে ওটাকে
গলাতে হয়। তখন সেখান থেকে যে ধোঁয়া বের হয় সেটা একটা নলের মাধ্যমে মুখ
দিয়ে গ্রহণ করা হয়। তখন সেটা মুহূর্তের মধ্যেই সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রে
গিয়ে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
ইয়াবাকে বলা হয় 'আপার ড্রাগ' কারণ এটি গ্রহণ করলে শুরুতে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। যারা ইয়াবা গ্রহণ করেন তারা ভাবে
- ইয়াবায় শরীর চাঙা হয়
- রাতের পর রাত জেগে থাকা যায়
- যৌন উদ্দীপনা বেড়ে যায়
- হেরোইন ও ফেনসিডিল খেলে শরীর ঝিম মেরে থাকে
- তখন বিচরণ করে কল্পনার রাজ্যে
হেরোইন ও ফেনসিডিল হচ্ছে ইয়াবার
বিপরীতধর্মী ড্রাগ। এগুলো নারকোটিক এনালজেসিক। অর্থাৎ ব্যথানাশক ওষুধ।
এটিকে বলা হয় 'ডাউনার ড্রাগ' কারণ এটি খেলে সে ঝিম মেরে থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই দুটো একই ধরনের মাদক।
হেরোইন হচ্ছে ওপিয়ামের একটি প্রাকৃতিক ডেরিভেটিভ আর ফেনসিডিল সিনথেটিকের।
এই দুটো ড্রাগের মধ্যে যে রাসায়নিকটি থাকে সেটি হচ্ছে কোডিন ফসফেট।
হেরোইনের মধ্যে এটি একটু বেশি পরিমাণে থাকে। কোডিন ফসফেট খেলে মানুষ স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করে। নিজেকে রাজা বাদশাহ ভাবতেও অসুবিধা হয় না।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
অনেকে ইয়াবা গ্রহণ করে যৌন উদ্দীপক
হিসেবে। প্রথম দিকে সেটা কাজ করে যেহেতু এটা খেলে শারীরিক উত্তেজনার সৃষ্টি
হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার যৌন ক্ষমতা একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়। শুক্রাণু
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যায়। মেয়েদের
মাসিকেও সমস্যা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস,
লিভার, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে সেগুলোও
ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ইয়াবা খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। লিভার সিরোসিস
থেকে সেটা লিভার ক্যান্সারেও পরিণত হতে পারে।
- যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়
- ফুসফুসে পানি জমে
- কিডনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়
- লিভার সিরোসিস থেকে ক্যন্সারও হতে পারে
- মেজাজ চড়ে যায়, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, নিষ্ঠুর হয়ে যায়
- রক্তচাপ বেড়ে যায়
- সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়
- মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়
- স্বাস্থ্যের অবনতি হয়
- ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় শরীরে
- যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়
- ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ
ফেনসিডিল ও হেরোইনের বেলাতেও
দ্রুত গতিতে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। কারণ তারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে
পারে না। তাদের খাওয়ার প্রয়োজনও খুব একটা পড়ে না। কারণ হেরোইন কিম্বা
ফেনসিডিল খেলে ক্ষুধা কেটে যায়। ফলে তাদের সাধারণ পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয়
না। যার কারণে তাদের শরীরে সব ধরনের ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। হেরোইন ও ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে মানসিক
সমস্যা তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু ইয়াবার ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা
তৈরি হতে সময় লাগে না।
গবেষকরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সেটা বলা কঠিন। তবে
ছেলেরা যতো সংখ্যায় চিকিৎসা নেয়, মেয়েরা কিন্তু অতোটা নেয় না।
সামাজিক কারণেই তাদের নেশা সংক্রান্ত সমস্যা পরিবার থেকে গোপন রাখা হয়।
ফলে এটা বোঝা একটু কঠিন যে মেয়েরা কি পরিমাণে আসক্ত, মেয়েদের ইয়াবার নেশা শুরু হয় ঘুমের বড়ি
থেকে। নানা ধরনের মানসিক যন্ত্রণার কারণে তারা যখন রাতে ঘুমাতে পারে না তখন
তারা ঘুমের বড়ির আশ্রয় নেয়। তারপর ধীরে ধীরে ইয়াবার মতো অন্যান্য
মাদকেও আসক্ত হয়ে যায়।



No comments:
Post a Comment